মাধুরী দীক্ষিতের বর : ১টি পুনরাধুনিক আখ্যান




নদীবাঁধের গায়ে ডিসপেন্সারি। সামনে মোরাম রাস্তা। রাস্তাটার সারাদিনব্যাপী ধুলো সরবরাহের ফলেই, মলিনতাও যে একরকমের স্বচ্ছতা, এ তথ্য অসীম ডাক্তার ঠিক ততটা জানে না, যতটা তার রোগীরা। বা রোগিনীরা। খুব বাহারী অসুখ নিয়ে কেউ অবিশ্যি অসীমের কাছে আসে না। তার অবনত ডিসপেন্সারি। তার চেয়েও অবনত একটা টেবিল ক্লথ। কিছু পোষমানা ঠাকুর-দেবতার ক্যালেন্ডার। জীর্ণ স্টেথো আর প্রেসারমাপক যন্ত্র। আলমারির ধুলোজমাট কাচের আড়ালে কিছু আবছা শিশিবোতল। সেগুলোর এক্সপায়ারি ডেটের তোয়াক্কা কেউ না রাখলেও, অনেক শিশিবোতল আজ কোনো কাজের নয়। নেহাত সাজানো আছে। সাজাতে শিখিয়েছিলেন স্বপন ডাক্তার। স্বপন বক্সী। অসীমের গুরু। এই এলাকার ডাকসাইটে পাশ করা ডাক্তার। এখন বৃদ্ধ পক্ষাঘাতগ্রস্তএখন রোগীহীন।
রোগী চলে যাওয়াটাই একজন ডাক্তারের ঘোরতম অসুখ।
অসীম ডাক্তারের এখনও সেই অসুখ নেই। সারাদিনে অন্তত পঁচিশ-তিরিশজন সর্দি-কাশি-জ্বর-অম্বল-আমাশা-অজীর্ণ-নোখকুনি-দাদ-মাসিকের রোগী সে পেয়ে যায়। সাড়ে দশটায় ডিসপেন্সারি খোলার আগেই পাঁচ-ছয়জন অপেক্ষা করে। মাঝরাতে ফোন আসে পেট খারাপের ওষুধ জানতে চেয়ে।
অসীম ডাক্তার নিজেকে প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছে। সারা মাসে তার রোজগার এখন প্রাইমারি ইস্কুলের হেডমাস্টারের চেয়ে বেশি।  
কিন্তু এই এলাকার লোকজন চিকিৎসার বাইরে তাকে খুব বাঁকা চোখে দেখে।
কলির কেষ্ট ঠিক যতখানি বাঁকা। যতখানি অপ্রতিরোধ্য।
একটা সময় ছিল কিছু কিছু অন্য ধরণের রোগিনী আসত। গ্রামের খুবই সামান্য মেয়েজাতীয় মানুষ তারা। কিন্তু তাদের শুকনো শরীরে অসীমের জলের ভাষা তারা অবলীলায় বুঝে নিত। অসীমের নিঃশব্দ ডাকে পরে তারা আবার আসত, সামনের মোরাম রাস্তাটা যখন অন্ধকার ও ফাঁকা থাকত, গ্রাম হয়ে যেত নিঝুম।  আজ কেউ বোঝে না। বুঝতেই চায় না।
আগেও সে দেখতে ভাল ছিল না। আর এখন তো অসীমের মাথাজোড়া টাক, বিশ্রী একটা ভুঁড়ি, গায়ের রঙ রোদে পুড়ে খাকসে এখনও চল্লিশ পেরোয়নি, কিন্তু আজ আর মেয়েরা তাদের শরীরের অ-জায়গায় তার হাত পড়লে শিউরে ওঠে না। খেয়ালই করে না। বরং জানিয়ে দেয় প্রভাতকালীন কোষ্ঠকাঠিন্যের দুঃখ, বা বয়ঃসন্ধিকালীন মাসিকের দুর্গন্ধ, অকপটেই।
এখন রাস্তায় কোনো মেয়ে তার দিকে অকারণে চোখ ফেলে না। এক লম্পট যে তাদের হাতের নাগালে আছে, মেয়েরা বুঝি ভুলেই গেছে।
কিন্তু বাইরের পুরুষজাতীয় মানুষরা কেউ সেই বিস্মরণের খবর রাখে না।
পুরুষদের চোখে অসীম ডাক্তার আজও এই এলাকার শ্রেষ্ঠ চরিত্রহীনতাকে ঈর্ষা করে তার হাঁটুর বয়সী ছেলেরাও।
এবং, পুরুষের প্রতি পুরুষের ঈর্ষা কম কথা নয়।
ওটা চলে গেলে অসীমের আর রইল কী?
কিন্তু, খ্যাতি মাত্রই এক অসার গুজব। সেটা নিজের অজান্তেই টের পাচ্ছে, আর ভেতরে ভেতরে দগ্ধে যাচ্ছে অসীম।

#

অসীমের নারীবিষয়ক খ্যাতিকে পুরোপুরিই বিশ্বাস করে অসীমের বৌ। মাধুরী। মাধুরীর যে বছর হাতেখড়ি হয়েছিল, অনিল কাপুর-মাধুরী দীক্ষিতের ‘তেজাব’ রিলিজ করেছিল। মাধুরীর বাপ ভিডিও হলে ছবিটা দেখেই ইস্কুলে দেওয়ার জন্য মেয়ের নাম ঠিক করে ফেলেছিল
অবিশ্যি ‘তেজাব’ সিনেমায় মাধুরী দীক্ষিতের বাপ অনুপম খের আদৌ সুবিধের লোক ছিল না। মেয়েকে বাজারে নামাতে চেয়েছিল। লোকের সামনে গা খুলে নাচিয়েছিল। মাধুরীর বাপ তেমন নয়। মেয়ের বিয়ে ধুমধাম করেই দিয়েছিল। সারাদিন মাধুরী দীক্ষিতের গান বেজেছিল। খাসি-মুর্গি দু-রকম মাংসই ছিল। লাল-হলুদ প্যান্ডেলের গেটে সাদা থার্মোকল সেঁটে লেখা হয়েছিল ‘মাধুরী + ডাক্তার অসীম পাল’অসীমের নাম অনিল হলে রাজযোটক হত। সেই দুঃখটা ‘ডাক্তার’ লিখে ঢাকা দিতে চেয়েছিল মাধুরীর বাপ।
অসীম বৌয়ের কোনো অযত্ন করেনি। অযত্ন করার সময়ও অবিশ্যি অসীম পায়নি। সারাদিনে তার কোনো ফুরসৎ নেই। বাড়ি ফেরে রাত এগারটার পরে। কোনো-কোনো রাতে বাচ্চা ডেলিভারির কেস থাকলে, ফেরেই না।
সেই না ফেরার অন্য ব্যাখ্যাও হয়।
অন্য ব্যাখ্যাই হতে পারে কখনও সখনও।
মাধুরী অসীমকে কোনো বাধা দেয়নি বৃন্দাবনলীলায়। কোনোদিন জানতে চায়নি কিছু। সে অমন মেয়ে নয়। অমন বৌ নয়। তার মা-ও কোনোদিন জানতে চায়নি তার বাপের রাতের পর রাত উধাও হওয়ার কারন। কাঁদেনি। নিজের মতো করে নিয়েছিল নিজের জীবনকে। মাধুরী তার মায়ের মেয়ে। সেও কাঁদেনি।
কাঁদার জন্য কেউ পৃথিবীতে আসে নাকি!
ঘটনা হল, দীক্ষিত না হলেও, এই তিরিশ পেরোনো বয়সেও মাধুরী এই এলাকার সবচেয়ে রূপসী গৃহবধূ। এবং, তাকে নিয়ে অসীমের গর্বের শেষ নেই। এমন একটা মেয়ে তার বৌ হবে, অসীম স্বপ্নেও ভাবেনি। যে সব মেয়ের সঙ্গে সে বিছানায় গেছে, তারা কেউ চেহারার দিক থেকে মাধুরীর নখের যুগ্যি নয়।
প্রশান্তরও গর্ব কম নয়।
প্রশান্ত দোলই। পেশায় রাজমিস্ত্রী। অবিবাহিত। তরুণ। লোমশ। অসীমের নিকটতম প্রতিবেশী।
যে রাতগুলোয় অসীম বাড়ি ফেরে না, আজকাল সত্যিই কাজের জন্যই ফেরে না, প্রশান্তই মাধুরীকে সীমায় বেঁধে রাখে।
এই নিয়ে মাধুরীর কোনো গ্লানি নেই। সে অসীমের খ্যাতিতে বিশ্বাস রেখেছে, যতটা জেনেছে, যতটা বোঝেনিসে জানে তার বর কুরূপ হলেও ঠিক কলির কেষ্টর মতো বাঁকা, ও অপ্রতিরোধ্য।
কাজেই...
একমাত্র এত বছরেও মা হতে না পারা ছাড়া অন্য কোনো দুঃখের সুযোগ মাধুরীর নেই।

                                           #

যা এত বছরেও হয়নি, আজ হল।
আজ রাতে খুব হাসিঠাট্টায় মেতেছিল মাধুরী আর প্রশান্ত। প্রশান্ত প্রথম যখন এই গ্রামে পাশের বাড়িটিতে ভাড়াটে হয়ে আসে, তখন সে জোগাড়েগিরি করত। রাজমিস্ত্রী হতে পারেনি। একবার তার লিঙ্গে ফোঁড়া হয়। অসীম সেই কষ্টকর ফোঁড়া সারিয়ে দিয়েছিল। কাটতে হয়নি। অসীমের দেওয়া ওষুধেই ফোঁড়া ফেটে গিয়েছিল। এখনও সেই দাগ আছে।
যদি কাটতে হত, এই যন্ত্র মাধুরীর এতটা মনে লাগত কি?
ফোঁড়ার দাগটা দেখিয়ে প্রশান্তের এই প্রশ্নে নিঃশব্দ হেসে গড়িয়ে পড়ছিল মাধুরী। তারপরে, কী ভেবে প্রশান্তের চিবুকে ঠোনা মেরে ফিসফিসিয়ে বলেছিল, ‘তোকে যদি মোর পেটের ছ্যানা করে লিতে পারতম রে শয়তান!’
প্রশান্ত অবাক হয়ে বলেছিল, ‘ই কি কথা গো বৌদি?’
সত্যিই অবাক হওয়ার কথা। এতদিনে প্রশান্তর ছেলের মা হয়ে যাওয়ার কথা যে মেয়ের, সে প্রশান্তকে পেটের ছেলে বানাতে চাইছে!
এ কী রঙ্গ!
কিন্তু এর ফলেই সে উত্তেজিত হয়ে পড়ল। সারা গায়ে আগুন লেগে গেল তার।
সেক্স জিনিসটা তো এমনই। সামান্য থেকে ওঠে না, দৈনন্দিন থেকে ওঠে না, প্রত্যাশিত থেকে পালিয়ে যায় মাধুরীকে নিজের মা কল্পনা করার সুযোগ তাকে উন্মত্ত করে তুলল।
আসলে তাকে খেপিয়ে দেওয়ার জন্যই মাধুরীর এটা নতুন লীলা। এই শীতেও পুরো ন্যাংটো করে মাধুরীকে বিছানায় ঠাপানোর সময় সেটা সবেগে টের পাচ্ছিল প্রশান্ত। মাধুরী মহাসুখে ককিয়ে ককিয়ে বলছিল, ‘মোর সোনা... মোর যাদু... মোর খোকাবাবা...মার! মার! মার!’
প্রশান্তর রোখ আরো চড়ে যাচ্ছিল।
আর ঠিক সেই সময়ই দরজা ঠেলে ঢুকে এল অসীম। এই প্রথমবার সে একটা ডেলিভারি কেস ফিরিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে এসেছে। সারারাত জাগাটা আজ দরে পোষায়নি।
এই প্রথমবার তার বৌ দরজা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল। নাহলে দরজায় করাঘাতের পরেই প্রশান্ত খিড়কি দিয়ে পালিয়ে যেতে পারত। সেই পথ খোলাই ছিল।
শরীর দুটো আলাদা হওয়ার আগেই সে দেখল অন্যদের বৌদের সঙ্গে সে যেটা করত, যেটার সে রাজা ছিল, আজকাল যে রাজত্বের শ্লাঘা সে করতে পারে না, দু-দিনের ছোঁড়া প্রশান্ত সেটাই তার এতদিনের বৌয়ের সঙ্গে করছে‍! তার বৌকে পুরো খুলে দিয়েছে, নিজের গেঞ্জিটা অবধি খোলেনি!
শালা!!!!!!
এর ঠিক তিন দিন পরে স্থানীয় শিমুল গাছে মাধুরী আর প্রশান্তকে ঝুলন্ত পাওয়া গেল। দুজনের মধ্যে মাধুরীই শিক্ষিত, ক্লাস সিক্স অবধি পড়েছিল সে। তারই হাতের লেখায় গাছের তলায় পাথর চাপা এক চিরকুট... ‘আমরা ভাল ছিলম। লোকে আমাদিকে ভুল বুঝল ক্যানে? আমরা চলে যাচ্ছি। আমাদের মিত্যুর জন্যে কেউ দায়ী লয়।’
পুলিশ ঝামেলা করল। তবে বাড়াবাড়ি কিছু করতে চাইল না।
বেশ কিছু টাকা খসল অসীমের।

#

এর ঠিক সাতাশ দিন পরে অসীম ডাক্তার আবার তার ডিসপেন্সারি খুলল। এর মধ্যে সে মিহি দাড়ি রেখেছে। এর মধ্যে সে কিছুটা রোগা হয়েছে। এখন তাকে আগের চেয়ে কমবয়সী, কিন্তু আরো অনেক কম আকর্ষনীয় দেখায়।
হ্যাঁ, আজকাল মেয়েরা আবার তার দিকে তাকায়। তার সঙ্গে চোখাচুখি হলে লাল হয়ে যায় তারা।
সে চোখ সরিয়ে নেয়।
অসীম আজকাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মুখ নীচু করে থাকে। কিন্তু পুরোনো অভ্যাস তাকে বলে দেয়, কিছু-কিছু তৃষ্ণার্ত চোখ তার গায়ে সেঁটে থাকছে। ওই চোখগুলো তার বাইরের চেহারার পরোয়া করে না। অবিশ্যি তার ভিতরের খোঁজও রাখে না। ওরা জেনে গেছে অসীম তার বৌকে নাগরের সঙ্গে বিছানায় ন্যাংটো ধরেছিল। দুজনকেই বেদম মেরেছিল। বৌকে কাপড় ছাড়াই রাস্তায় বের করে দিয়েছিল। পাড়ার লোক ছুটে এসে কাপড় দিয়েছিল মেয়েটার গায়ে। তারপরে পাড়ার লোকেই হারামজাদা নাগরটাকে উদোম করে মেরেছিল।
বেইমান বৌটা মরেছে নাগরকে সঙ্গে নিয়ে। এমন একটা পুরুষমানুষের কদর বুঝল না!
অসীম আজ স্থানীয় এক রূপকথা। এক বঞ্চিত পুরুষ। বঞ্চনা আর তৃষ্ণাকে আলাদা করার দরকার আছে কি কিছু?
অসীম ভাবছে অসীমের ভিতর থেকে তার বাঁশি আর কদমতলা চলে গেছে। পুরুষরা সেই বৃন্দাবন বজায় থাকতেই দেখছে।
নিজের চোখে আজ অসীম এক অকিঞ্চিৎকর প্রাণী। মেয়েদের চোখে সে আজ আবার ঠিক ততটাই ফাঁকা, যতটা অপ্রতিরোধ্য।
সারাদিন অসীম দরজা খুলে বসে রইল। একজন রোগীও এল না।
সন্ধে সাতটার পরে যখন ডিসপেন্সারি বন্ধ করার কথা ভাবছে, রেখা সামন্ত এল।
যে বছর ‘সিলসিলা’ রিলিজ করেছিল, রেখা মাইতির জন্ম হয়েছিলতার মামা শহরে গিয়ে সিনেমাটা দেখেছিল। সে ছিল অমিতাভের মস্ত ফ্যান। বাড়ি ফিরেই ভাগ্নীর নাম রেখে দেয় রেখা। কারো আপত্তি হয়নি। বাপ-মা মরা মেয়ের একটা নাম জুটেছিল সেই ঢের।
এখন অবিশ্যি রেখা খুব বড়োলোকের বৌ। তার বর অলোক সামন্ত আগে পার্টি করত। এখন কন্ট্রাক্টরি করেএই এলাকার সবচেয়ে বড়ো বাড়িটা ওদের। রেখার একটা ফুটফুটে ছেলে আছে। ক্লাস এইটে পড়ে। অসীম ওদের বাড়ির ডাক্তার। অসীমের উপরে ওদের খুব ভরসা। ওরা শহরের ডাক্তার দেখাতেই চায় না।
রেখা অনেক দিন থেকেই কিছু কিছু মেয়েলি সমস্যায় ভুগছে। অসীমের ওষুধে সেরে যায়। আবার ফিরে হয়
অসীম টেবিলের দিকে তাকিয়েই বলল, ‘ক্যামন আছু?’
রেখা চেয়ারে আরাম করে বসল। শালটা জড়িয়ে নিল আরো ভাল করে। মিষ্টি গলায় বলল, ‘ভাল নাই গো।  তমার তো দেখা নাই। আবার পবলেম হচ্ছে। কাউকে বলতেও পারিনি।’
অসীম তাচ্ছিল্লের সুরে বলল, ‘ক্যানে? আমি ছাড়া কি কুনু ডাক্তার নাই?’
‘আছে। কিন্তু মোর বরটা তো ঘরে নাই। কলকাতা গ্যাছে সাতদিন হল। কার সঙ্গে যাব ডাক্তার দ্যাখাতে?’
রেখা হেসে উঠল। এই কথায় হাসির কারনটা অসীম বুঝল না।
‘হাসছু ক্যানে?’
রেখা হাসতে হাসতেই বলল, ‘এমনি। তমাকে দাঁড়িতে ক্যামন অদ্ভুত দ্যাখাচ্ছে গো অসীমদা!’
অসীম গম্ভীর গলায় বলল, ‘ও! তাই?’
‘দাঁড়ি রেখেছ ক্যানে অসীমদা? বিরহ? ভাগ্যমানের বৌ মরে, জাননি?’
কোন পরিস্থিতিতে তার বৌ মরেছে, আর ভাগ্যবান অসীম দাড়ি রেখেছে, রেখার না জানার কথা নয়। অসীমের রাগ হল। কিন্তু সারাদিনে এই একটামাত্র রোগী। সে ঠান্ডা গলায় বলল, ‘তর সমস্যাটা কী হচ্ছে সেইটা বল।’
রেখার হাসি মেলাল না। তবে সামলে নিয়ে বলল, ‘বলছি তো ! পবলেম হচ্ছে। সারাদিন মোর ওই জ্যাগাটা কুটায়।’
‘কুন জ্যাগাটা?
রেখা খুব যেন চেপে ধরে উত্তরটা ছুঁড়ে দিল, ‘অসভ্য জ্যাগাটা।’
অসীম টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বুঝল রেখা চাইছিল উত্তরটা দেওয়ার সময় তার চোখে নজর পড়ুক অসীমের। 
‘আগে অ্যামন হত?’
‘হলে কি তুমি জানতেনি? ক্যামন ডাক্তার গো?’
অসীম শুকনো গলায় বলল, ‘আমার অত স্মরণ নাই। তুই ছাড়াও তো রুগি আছে আমার।’
হাসি থামাল এতক্ষণে রেখা। স্বাভাবিক গলায় বলল,‘না, আগে হতনিকদিন হচ্ছে।’
‘ক্যানে? ঘসাঘসি কিছু হচ্ছে?’
আবার হাসতে শুরু করল রেখা, ‘ক্যানে ঘসতে যাব? মোর কি আর কাজ নাই?’
‘র‍্যাশ হতে পারে। খারাপ কিছুও হতে পারে। দেখতে হবে। পর্দার ওইদিকে চ।’
কথাটা বলেই চমকে উঠল অসীম। তার বুক চমকে উঠেছে। বাইরে জনশূন্য শীতের সন্ধে। দূরে দু-একটা কুকুরের ডাক ছাড়া অন্য কোনো আওয়াজ নেই। সে টের পাচ্ছে তার ভিতরে আবার ফিরে আসছে তার চিরকালের স্বচ্ছতা। কিংবা, তার সেই পুরোনো মালিন্য। অসীমের আগেকার চেহারার সঙ্গে তার নতুন চেহারাকে সোনালি সুতোয় জুড়ে দিতে চাইছে রেখা। ঊজ্জ্বল সোনালি সুতো। রেশমি। অসীম বুঝল, সে এখন আবার নেমে পড়তে পারে তার সংগ্রহের খেলায়। ফের তার ডাক এসে গেছে।
মেয়ে সংগ্রহ নয়। প্রতিদিনের কথার বাইরে অন্য কথার সংগ্রহ।
সে তো আসলে ওটাকেই রাজত্ব ভাবে। সে জানে না। লোকে ভাবে সেক্স। লোকে বোঝে না।
খ্যাতি মাত্রই এক অসার গুজব। ডাকটিকিট মাত্রই একটা চৌকো রসিদ।
উঠে দাঁড়িয়ে পর্দাটা সরাল অসীম। লম্বা সরু শক্ত বিছানা। পিচ্ছিল গদির উপরে একটা ফুল-ফুল চাদর ফেলা আছেশেষবার ওই চাদরটা মাধুরীই কেচেছিল। কাজের মেয়েটা আসেনি সেদিন
‘আয়। শুয়ে পড়।

মূল গল্পগ্রন্থ

1 comment:

  1. গল্পের মানদন্ড কী? এই প্রশ্নের যথার্থ উত্তর এক চিকিৎসকই কেবল দিতে পারে।কখন ওষুধের পরিমাণকে মর্মভেদী করবে কখন সহনশীল করে তুলবে তা কেবল চিকিৎসকই জানেন।আমরা একঘেয়েমি,মুখোরচক এসব থেকে উপশমের পথ পেয়ে গেলাম এক ডায়গোনসিসের মাধ্যমে।

    ReplyDelete