চাই, হাজারটা অস্কারের গলায় কাচ ফাটানো চীৎকার





কার চোখ এ-সকালে অনুবাদ পরিচিত হল!
কুয়াশায় লেগে আছে বিফল সঙ্গম
দিনগুলো ডিম নয়। হাঁসের কুসুম
জন্মের অনেক আগে বিক্রি হয়ে গেছে
রাস্তায় ছড়িয়ে আছে মন। হরমোন।
কেটে দেওয়া নামগুলো উড়েছে আকাশে।
সহজাত গলা চাই। সহজাত হাত।
সময়ের চোখে জল। ফ্যালাসির মতো
অনেক দূরের ধুলো। রোদ মাখে। ওড়ে।
ঢাক বাজে! ঢাক বাজে! টিন ড্রাম বাজে
নাঃ! যে লেখাটা পড়তে যাচ্ছেন, সেটার সঙ্গে গুন্টার গ্রাসের ‘দ্য টিন ড্রাম’-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাতে কী? চলুন, দেখা যাক

ছোট আমি! জ্যাঠা আমি! বড়ো তো হবনা
পরিণত। সাবালক। জন্মের পরেই।
এটাও তো বুঝি না কে আমার বাপ!
ঢাক বাজে! ঢাক বাজে! বাজে প্রতিশোধ!
এই ঢাক অভিশাপ। এই ঢাক বর।
বয়স-পৃথিবী হাতে ঢাক হয়ে বাজে।
কেন আমি মুদি হব? কিছুতে হবনা।
তার চেয়ে ভাল এই খোকা সেজে থাকা।
খাটো আমিপাগল তো কোনোভাবে নই।
চিকিৎসার প্রয়োজন তোমাদের বেশি।
তবু দ্যাখোবসে আছি পাগলা গারদে।
চিন্তার কবর নাকি স্বাধীন শহর?
এমন চেঁচাব সব কাচ ফেটে যাবে
পাগল কাহাকে বলে? বামন কাহাকে বলে? উচ্চতা কী? বয়স কাহাকে বলে? ‘দ্য টিন ড্রাম’ আমার এই প্রিয় প্রশ্নগুলো করার সুযোগ আমাকে বারবার দেয়, এবং তার ফলেই আমি গুন্টার গ্রাসের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকি। আমার নিজের তো কোনোকালেই কোনো ছেলেবেলা ছিল না। শৈশব কাকে বলে আমি একেবারেই জানি না। সেটা জানতে হলে কি আরো অনেক শিশুর সঙ্গে বড় হতে হয়? ঠিক যেমন ক্যামেরার সামনে আসার আগে ক্যামেরার পিছনটা জানতে হয়? সেই সুযোগ আমার ছিল না। একটা বয়স অবধি আমাকে শিশু হওয়ার অভিনয় করতে হয়েছে। একটা সময় সেই অভিনয় অপ্রাসঙ্গিক ও বিপজ্জনক হয়ে গেছে, ফলে ছেড়ে দিয়েছি। ‘দ্য টিন ড্রাম’-এর অস্কার সেই ঝুঁকিটাই নিয়েছিল যা আমি নিতে পারিনি, সে অভিনয়টা ছাড়েনি।
হ্যাঁ পাঠক, একেবারে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েই আমি জন্মেছিলামআজ বলতে পারি, স্মরণাতীত কাল থেকেই আমি সেইসব কিছু জানতাম-বুঝতাম, যা আমি আজ জীবন সম্পর্কে জানি-বুঝি। মাত্রাগত পরিবর্তন হয়তো আমার বয়সের ক্ষেত্রে হয়েছে, অবশ্যই হয়েছে, কিন্তু গুণগতভাবে আমি কিছুমাত্র বেশি বয়স্ক হইনি আমার শৈশবের তুলনায়। এ কোনো জাদুবাস্তব বয়। এ কোনো অসাধারনত্বও নয়অসাধারণ’ শব্দটা আজ শুয়োরের মাংস হয়ে গেছে। আসলে আমি ছেলেবেলায় বড়ো হতে অস্বীকার করেছিলাম, প্রয়োজন হয়নি বড় হওয়ার, এবং চিরশিশু রয়ে গেছি।
হ্যাঁ, একমাত্র শিশুরাই এই পৃথিবীতে বয়স্ক ও পরিণত। একমাত্র পাগলরাই এই পৃথিবীতে সুস্থ। জাদু। এটুকুই। বাস্তব। এটুকুই। নিজের সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়? আপনি কি কখনও শিশু ছিলেন? শিশু কাকে বলে, প্রিয় পাঠক? কী বলেন, শৈশব কি একটা অশুভ শব্দ হয়ে উঠতে পারে?
যেমন ধরুন না কেন, বামন অবতার। অবতার তো একটা শুভশব্দ নয়
হিসি করি। সেক্স পায়। হাগু করি। সেক্স।
খাবারে লুকিয়ে থাকে কামের লবণ।
বিছানা নরম হলে সেক্স-সেক্স লাগে।
ফিডিং বটলে স্তন। কামড়! কামড়!!
চুষিকাঠি চোষো কেন! কেন ললিপপ!!
ছোট আছ। সেজে থাকো। ও-সব চেওনা।
ও ব্যাটার রং দ্যাখো। ফাঁক যদি পায়
সৎ মাকে চেটে চুদে বাপ হয়ে যাবে
!
বয়সের সঙ্গে কামপ্রবণতার যোগ কতটা? এ-ও এক প্রিয় প্রশ্ন। আমি নিজের জন্য এমন কোনো বয়স স্মরণ করতে পারি না, যখন শুক্রক্ষরণ না থাকলেও, আমার যৌনাঙ্গে কোনো উত্তেজনা ছিল না। এবং, সম্ভবত, কোনো মানুষই সেটা পারেন না। আপনি কি পারেন? যদি পারেন, আপনাকে আমি শুধোব স্মৃতির স্বরূপ। যৌনাঙ্গ যৌনাঙ্গই থাকে, এবং একটা বয়সে সে মাতব্বরি করা শুরু করে, কিন্তু তার আগে সে সম্পূর্ণ ঘুমিয়ে থাকে, এটা অসম্ভব। আর, কে না জানে, মানুষের প্রবলতম যৌনাঙ্গ হল তার ব্রেন। গুন্টার গ্রাস যেভাবে এই প্রসঙ্গটি ‘দ্য টিন ড্রাম’-এ তুলে ধরেছেন, কোনো মনঃস্তাত্বিকের পক্ষে সেটা দুর্গম ছিলশিশুরা আসলে শিশু সেজে থাকে। তাদের অনেক ছ্লাকলাই আদতে অভিনয়, যাতে আত্মরক্ষায় সুবিধে হয়।
অস্কারের সঙ্গে তার সৎ মায়ের (অবিশ্যি ‘মা’ হওয়ার আগেই তো ভ্যানিলার গন্ধ সে পেয়েছে মারিয়ার ঊরুসন্ধিতে, ওরাল সেক্স দিয়েছে মেয়েটিকে, নাভিতে ফিজ পাউডার রেখে চেটেছে, ওই পাউডার-পর্বের পরেই তো সে বাবা হয়ে যায়। উফ! পারভার্সন! পারভার্সন!! হোক না, ফুলশয্যায় রজনীগন্ধা কেন থাকে, পাঠক?) যে সম্পর্ক গ্রাস দেখিয়েছেন, বাপের সঙ্গে তার যে যৌন প্রতিদ্বন্দিতা, তা ইনসেস্ট, অবশ্যই, পর্নোগ্রাফিক কি? তাহলে ঈদিপাসের কী হবে? গ্রাসের অভিসন্ধি মোটেই ঈদিপাসকে মনে করায় না। বাপকে বিয়ে করার আগেই তো মায়ের পেটে ছেলের ছেলে এসে গেল!
আসলে কোথায় গিয়ে কাম আর ক্রোধ আলাদা হয়, কাম আর লোভ, কাম আর ঈর্ষা আলাদা হয়, যৌন সততা আর পারভার্সন মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে, কেউ জানে না। সৎ মা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি কাকীমা, মাসীমা, জেঠিমা, মামিমা, এমনকি বৌদির চেয়েও অনেকটাই কম মা। একটি সমর্থ ছেলে তার পিপাসিত সৎ মা-র সঙ্গম শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই করতে চাইতে পারে। বাপের উপরে, জীবনের উপরে। একরকম হিংস্রতা। ঠিক ওই টিনের ঢাকের বাজনা যেমন কর্কশ বাজে। সৎ মা-র পেটে নিজের ছেলে জন্মাবে, জীবনের প্রতি, পৃথিবীর প্রতি, তার চেয়ে অধিক বিস্ফোরণ আর কী ঘটাতে পারে একজন সমাজবদ্ধ মানুষ? অবিশ্যি সেই বাচ্চাকে নষ্ট করতেও সে চেয়েছিল, সৎ মা-কে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে। কাঁচি দিয়ে পেট ফুটো করার চেষ্টা করেছে। শেষে চেয়েছিল সেই সন্তানটি থাকবে তার মতো বামন হয়ে, খোকা সেজে, এই তো অস্কার চেয়েছিল। সেটা হল না। বাচ্চাটা ‘বড়’ হতে শুরু করল। অস্কার চরম হতাশ হল। এ জন্য অস্কারকে করুণা করতেই হয়। কিন্তু ঘৃণা নয়। ওই পরকীয়া তো তার প্রাপ্য হয়েছিল। কী বলেন, পাঠক?
খোলা মেয়েছেলে আর প্রতিশোধ, দুই যদি একই অঙ্গে মুখিয়ে থাকে, কোন ব্যাটাছেলে মুখ ফিরিয়ে নেবে? রিভেঞ্জ ইজ দ্য পিওরেস্ট ইমোশন। তাই না? কিন্তু সেটার জন্য পিওরেস্ট নিজেকেও হতে হবে যেমন ভীষ্ম বা কর্ণকে হত্যা করার আগে... অর্জুন, একিলিসের গোড়ালিতে তিরটা মারার আগে... প্যারিস
                            
!
ঢাক বাজে! ঢাক বাজে! বেমানান ঢাক!
রূপক আড়াল করে যুদ্ধের স্বরূপ।
বামনের হাতে ঢাক অস্ত্র হয়ে বাজে।
ভয়াবহ আর্তনাদ। বাজে প্রতিবাদ।
মানুষের কত বাকি জানোয়ার হতে?
মানুষের ভালো ছিলঘাস। হয়ে থাকা।
আর কত হিটলার- এ পৃথিবী পাবে?
আর কত? আর কত? ঢাকের সওয়াল
নাৎসিদের গর্জন, কুচকাওয়াজের বহরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় অস্কারের ঢাক। জার্মান আর পোলিশদের মধ্যে চলছে লড়াই। জ্বলছে সিনাগগ। বাজছে অস্কারের ঢাক। নাছোড়বান্দা সে। অস্কার একই সঙ্গে রাসপুতিন আর গ্যেটের লোক সে শিশু সেজে থাকে, সে-ই এটা পারে, ঠিক যেমন সার্কাসের জোকার অনায়াসে বলশালী খেলোয়াড়ের প্যান্ট খুলে নেয়, রূপসী ট্রাপিজ শিল্পীর পেছনে চিমটি কাটে, এবং দর্শক হো হো করে হাসে। হাসি। ভয়। একাকার হয়ে যায়।
ত্রাসের পরিবেশে বেমানান জেগে থাকে ঢাকের আওয়াজ, যেন খোদ জীবন প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সেই সঙ্গেই উপহসিত হয় সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা আসলে স্বৈরাচারের নীরব পিলার তা সে জার্মানি হোক বা ইরাক বা পশ্চিমবঙ্গ। অস্কারের ডাক তাদের কানের পর্দা ফাটিয়ে দিক, এটা আমরা চাইতেই পারি, কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। তারা বধির। সমাজ আর আবহাওয়াকে তারা আলাদা করতে পারে না। তারা জানেই না জলবায়ু কাকে বলে, তুষারযুগ কেন এসেছিল, কেন চলে গিয়েছিল, মাঝখানে কেন তৈরি হয়েছিল নূহ-র জাহাজ, সেই জাহাজে কেন ছিল না হস্তমৈথুনের সুবিধা
পন্যায়িত হয়ে থাকে যাদের বিবেক, তাদের খোলস যেন আজ প্যাকেট হয়ে আছে, ঢাকের আওয়াজ আছড়ে পড়ে। ওই ঢাক। রাজনৈতিক। ওই ঢাক কথা বলে সেই সিল্কি প্যান্টিহোসের বিরুদ্ধে যা আসলে প্রেমের উপহার নয়, পুরুষটি তা নিয়ে এসেছে আধিপত্যের লোভে, এক শরীর আরেক শরীরের উপরে আধিপত্য করবে। নামেই উপহার, আসলে তো বিনিময় মূল্য। বামনের কুঁজে মৃদু আঘাত করলে কালোবাজারে ভাগ্য ফিরে যায়, সেখানেও ব্যবসার সুযোগ।
হিটলার। একজন মানুষ, হোমোস্যাপিয়েন্স, ঠিক ২০৬-টা হাড়সহ, তার বেশি নয়। আসল হিটলার অন্যত্র আছে একটা হিটলার তৈরি হয় কয়েক কোটি মধ্যবিত্তর মাঝারিয়ানা ত্রাস আর নিরাপত্তাবোধ জমিয়ে। আর, সেই বরফে ফাটল ধরাতে চাই হাজারটা ঢাক, হাজারটা অস্কারের গলায় কাচ ফাটানো চীৎকার, হাতে যুতসই কাঠি
ঢাকের কাঠিটি পাক লিঙ্গের আকার
পতাকা ভিজিয়ে দিক প্রিকামের রসে
ঝুলে যাবে নুয়ে যাবে সব জয়ধ্বজা-
সাধারণ যদি পায় সঠিক মৈথুন।
প্রতিটি লিঙ্গের হোক প্রিয় যোনি পায়ু
যোনিতে যোনিতে ঘসে নীহারিকা হোক
সামর্থ্য যেন না আর অপচয় হয়।
ঢাক বাজে! ঢাক বাজে! রাজনীতি বাজে!
মেঘ ডাকে- পুরুষের শীৎকারের মতো
                            
     এমনকি অস্কারকেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে লম্বা হতেই হয়। তিন ফুটিয়া ‘লোকটা’ চার ফুট এক ইঞ্চিতে পৌঁছেও যায়। গাঁটে গাঁটে অনুভব করে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির ব্যথা। নাহ, অমিতাভ বচ্চন সে হবে না কোনোদিন, শুধু... লম্বা হতে হয়... লম্বা হতেই হয়...
তাহলে? নাঃ! বুঝতেই পারলেন, এই বিচ্ছিরি লেখাটা মোটেই গুন্টার গ্রাসের ‘দ্য টিন ড্রাম’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটা, একটা অন্য লেখা

No comments:

Post a Comment